Tuesday, November 20, 2012

দাবা মধ্যভাগের কলাকৌশল - chess middlegame planning

part 9

খেলার মধ্যভাগ

ভূমিকাঃ

আগের লেখায় আমরা খেলার প্রারম্ভিক ভাগ সম্বন্ধে কথা বলেছি। প্রারম্ভিক ভাগ এর শেষে হাতি এবং ঘোড়া সাধারনত প্রাথমিক অবস্থান থেকে বাইরে এসে বোর্ডের মাঝমাঠ দখল এর জন্য তৈরী হয়, রাজা দুর্গ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বোর্ডের এক প্রান্তে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করে, এবং দুই নৌকার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হয়। খেলার প্রারম্ভিক ভাগ শেষ হবার পর খেলার মধ্যভাগ শুরু হয়।

এবার আমরা খেলার মধ্যভাগ সম্বন্ধে আলোচনা করবো। মধ্যভাগে সাধারণত বোর্ডের এমন একটা পজিশন তৈরী হয় যেটা আপনি আগে কখনও দেখেননি।  প্রারম্ভিক অবস্থার মতো একদম শুরুতে ঘুটির অবস্থান আপনি জানেন না। তাই কোনো বাধাধরা নিয়ম মেনে খেলা কঠিন। তাই এই অবস্থায় নিজের বিচারবুদ্ধি ই ভরসা। খেলার মধ্যভাগ পরিচালনা করা সবচেয়ে জটিল। মধ্যভাগ কি ভাবে খেলতে সেটা সেখানো বা সহজে বর্ণনা করা খুব কঠিন। তবে বেশ কিছু মৌলিক ব্যাপার শেখানো যেতে পারে। মৌলিক ব্যাপারগুলো জানা থাকলে কোনও অচেনা পরিস্থিতিতে খেলা পরিচালনা করতে সুবিধা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয়গুলো নিচে উদাহরণ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করবো।

মধ্যভাগের পরিকল্পনার রকমভেদঃ 

দাবার ভাষায় খেলার মধ্যভাগের পরিকল্পনা (planning) কে সাধারনত দু ভাগে ভাগ করা হয়ঃ স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা (tactics) ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা (strategy)। তবে অনেক সময় স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা কে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় পরিনত করা সম্ভব, বা উল্টোটাও সম্ভব। এই ব্যাপারগুলো ঠিক কী তা লিখে বোঝানো খুব কঠিন। তাই উদাহরণ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করবো।

স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনাঃ

প্রথমে আমরা স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলবো। স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা বলতে প্রত্যেক এক বা দুই চালে নিজের বা প্রতিপক্ষের তৈরী করা সমস্যা-সম্ভাবনা-সুযোগ-সুবিধা এইসব বোঝানো হয়। দাবায় শিখতে চাইলে অন্য কিছু শেখার আগে tactics শেখা আবশ্যক, কারন আপনি আপনার ঘুটি হারালে খেলায় হার নিশ্চিত। বলা হয় chess is 99 % tactics, এবং এই কথাটা একদম সত্যি। সাধারণ মানের খেলোয়াড়দের মধ্যে সাধারণত একজন অপরের ঘুটি খুব সহজে খেয়ে নিয়ে খেলা জিতে যায়।

অরক্ষিত ঘুটিঃ

যেমন, আপনি যদি আপনার একটা ঘুটি প্রতিপক্ষের দখল আছে এমন একটা অরক্ষিত ঘরে চালেন তাহলে প্রতিপক্ষ পরের চালে সেই ঘুটি খেয়ে নিতে পারে, এবং বাকি খেলার জন্য তার একটা ঘুটি বেশি থাকবে। তাই এরকম ভুল থেকে বিরত থাকলে ভালো। প্রতিপক্ষ আপনাকে বিনামূল্যে একটা ঘুটি খেতে দিলে আপনি খেয়ে নিন, তাহলে আপনার ঘুটি বেশি থাকবে, এবং বাকি খেলায় আপনার জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আপনি যদি একদম নতুন খেলা শেখেন তাহলে দেখবেন বোর্ডের সমস্ত ঘুটির খেয়াল রাখা বেশ কঠিন। তাই আপনার কোনো ঘুটি অরক্ষিত ঘরে চালার আগে খেয়াল রাখুন যেন প্রতিপক্ষ বিনামূল্যে ঘুটিটি খেয়ে নিতে না পারে। বা বিশেষ প্রয়োজন না হলে কোনো ঘুটি অরক্ষিত ঘরে চালবেন না। সমস্ত ঘুটি একে অপরের দ্বারা সংরক্ষিত রাখুন। এবং প্রতিপক্ষ কখনও তার কোনো ঘুটি অরক্ষিত রাখলে সেই ঘুটি খেয়ে নেবার কোনো উপায় আছে কি না দেখুন। 

লাভজনক বিনিময়ঃ

বিনামূল্যে কোনো কিছু খেতে পেলে সবসময়েই ভালো। কিন্তু প্রতিপক্ষ একটু শক্ত হবার সাথে সাথে আপনাকে বিনামূল্যে কিচু খেতে দেবে না, তাই খাওয়ার অন্য কৌশল শিখতে হবে। নিজের কম মুল্যের ঘুটির বিনিময়ে প্রতিপক্ষের বেশি মূল্যের ঘুটি খাওয়া যায় কি না দেখুন। এতে সব মিলিয়ে আপনার লাভ হবে। যেমন আপনি যদি একটা নৌকার বিনিময়ে প্রতিপক্ষের মন্ত্রী খেয়ে নিতে পারেন তাহলে আপনার লাভ, কারন মন্ত্রীর দাম বেশি, কারন মন্ত্রী ৯, নৌকা ৫।

একই কারনে বোড়ের বদলে অন্য কোনো ঘুটি খাওয়া লাভজনক, বা গজ বা ঘোড়ার বদলে নৌকা বা মন্ত্রী খাওয়া লাভজনক। এমনকি একটা দুইটি হাতি বা একটি ঘোড়া ও একটি হাতির বদলে একটা মন্ত্রী খাওয়া লাভজনক। কারন দুটি হাতি মিলিয়ে মোট ৩ আর ৩ বা ৬, কিন্তু একটা মন্ত্রীর দাম ৯। এরকম কোনো বিনিময়ের সময় হিসাব করে দেখুন বিনিময়ের ফলাফল কি হয়। লাভ করার চেষ্টা করুন, বা যখন লাভ করা সম্ভব নয় তখন লোকসান না করার চেষ্টা করুন। 

এবার পয়েন্ট জেতার আরও কিছু কৌশল শেখাবো।বিপক্ষের ঘুটি বিনামূল্যে বা লাভজনক ভাবে জিতে নেওয়ার জন্য অনেক সময়েই অরক্ষিত ঘুটি কে আক্রমন করা ভালো, কিন্তু বিপক্ষ সাধারণত পরের চালে সহজেই যথাযত রক্ষণের মাধ্যমে আক্রমন প্রতিহত করার সময় পাবে এবং নিজেকে বিপন্মুক্ত করবে। তাহলে পয়েন্ট জেতার উপায় কি? উত্তর নিচের সেকসনে।

দ্বৈত আক্রমণ (double attack): 

একটা দুর্বল লক্ষ্যে আক্রমণ সফল হওয়ার সম্ভাবনা যেহেতু কম, একটার বদলে দুটো লক্ষ্যে একসাথে আক্রমন করার কথা ভাবুন। হ্যা, একমুখী আক্রমন এর চেয়ে দ্বিমুখী আক্রমণ অনেক বেশি কার্যকর। সোজা নিয়ম, তাই তো? নিজের খেলায় এই নিয়ম প্রয়োগ করা কিন্তু এতো সহজ নয়। আসলে প্রচন্ট জটিল পজিশনে বিশাল কঠিন সব চালের পিছনে কোথাও কোনোভাবে দ্বৈত আক্রমণ লুকিয়ে থাকে। কিন্তু সব সময় আক্রমণ এর লক্ষ্যবস্তু খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। তাই অভ্যাস এর দরকার। যত অভ্যেস করবেন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু খুঁজে পাওয়া তত সহজ হবে।

দ্বৈত আক্রমণ কেমন হয় নিচে খুব সহজ উদাহরণ দিয়ে দেখাচ্ছি।



উপরের ছবিতে সাদা নৌকা একসাথে দুটো কালো ঘোড়া কে আক্রমণ করেছে, কালো এর মধ্যে একটা ঘুটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পারে, কিন্তু অন্যটা সাদা পরের চালে খেয়ে নিতে পারে। সুতরাং সব মিলিয়ে কালোর একটা ঘোড়া লোকসান হবে। 



দ্বৈত আক্রমণ কে অনেক সময় ফর্ক বলা হয়। ঘোড়ার চাল বাকি ঘুটির থেকে অন্যরকম হওয়ার জন্য ঘোড়া এতে খুব কাজে লাগে। উদাহরণ নিচে। 



উপরের পজিশনে তীর অনুসরণ করে সাদা ঘোড়ার চাল দিয়ে একসাথে রাজা ও মন্ত্রী কে আক্রমণ করতে পারে। আর একটা উদাহরণ



উপরের পজিশনে সাদার ঘোড়া তীর অনুসরণ করে চাল দিয়ে একসাথে কালোর রাজা, মন্ত্রী ও নৌকা কে আক্রমণ করতে পারে। এই রকম ভাবে একটা ঘোড়া দিয়ে দুই এর বেশি বড় ঘুটি আক্রমণ করা কে ফ্যামিলি ফর্ক (family fork) বলে।

লক্ষ্য করে দেখুন, সাদা রঙ্ এর ঘরে থাকা ঘোড়া শুধুমাত্র কালো রঙের ঘরে যেতে পারে, এবং শুধুমাত্র সাদা রঙের ঘর আক্রমণ করতে পারে। তাই দুটো ঘুটি বিপরীত রঙের ঘরে থাকলে ঘোড়া দিয়ে একসাথে আক্রমণ করা সম্ভব নয়। ঘোড়া আক্রমণ এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার খুব সহজ উপায় হলো সব বড় ঘুটি একই রঙের ঘরে আছে কি না খেয়াল রাখা। নিচে আরও কিছু উদাহরণঃ


সাদা ঘোড়া একসাথে কালো রাজা ও নৌকা আক্রমণ করেছে। কালো অবশ্য মন্ত্রী দিয়ে সাদা ঘোড়া খেয়ে নিতে পারে, কিন্তু তাতে লোকসান হবে, কারন মন্ত্রীর দাম অনেক বেশী। ঘোড়া দাম তিন, কিন্তু মন্ত্রীর দাম নয়, আর নৌকার দাম পাঁচ, তাই মন্ত্রী দিয়ে ঘোড়া খাওয়ার বদলে নৌকা খেতে দিলে কম লোকসান হয় ( তিন এর বদলে পাঁচ)। 

নিচে একটু কঠিন উদাহরণ দেওয়া হলো।  



এই অবস্থায় কালোর চাল। দেখে মনে হচ্ছে কালোর মন্ত্রী বিনামূল্যে সাদার গজ খেয়ে নিতে পারে (সবুজ তীর), কিন্তু পরের চালে সাদা ঘোড়া লাল তীর বরাবর চেলে ঘোড়া দিয়ে একসাথে মন্ত্রী ও নৌকা আক্রমণ করবে। এবং পরের চালে মন্ত্রী খেয়ে নেবে। এতে সব মিলিয়ে সাদার লাভ হবে। কারন মন্ত্রীর দাম নয়, আর গজ ও ঘোড়ার সম্মিলিত মূল্য ছয়।

বোড়ে দিয়েও ভালো ফর্ক করা যায় অনেক সময়। উদাহরণ নিচেঃ



উপরের পজিশনে সাদা বোড়ে লাল তীর বরাবর চাল নিয়ে কালোর নৌকা ও ঘোড়া একসাথে আক্রমণ করতে পারে। ঘোড়া ও নৌকা দুজনেই বোড়ের চেয়ে শক্তিশালী হলেও এই আক্রমণের সামনে দুজনেই অসহায়, কারন এদের দুজনের কেউই বোড়ের মতো চলতে পারে না। আর একটা উদাহরণঃ

উপরের ছবিতে সাদা বোড়ের চাল দিয়ে একসাথে গজ ও ঘোড়া আক্রমণ করতে পারে। পরের চালে সাদা দুটো আক্রান্ত ঘুটির মধ্যে মাত্র একটা সরিয়ে নিতে পারে, অন্যটা সাদা খেয়ে নেবে। এক্ষেত্রে  কালো অবশ্য গজ দিয়ে সাদা বোড়ে খেয়ে নিতে পারে। কিন্তু পরের চালে সাদা কালোর গজ খেয়ে নেবে। তাতেও সব মিলিয়ে সাদার লাভ, কারন বোড়ের দাম সবচেয়ে কম। নিচের ছবিতে চালটি বোঝানো হলো।





Sunday, November 18, 2012

দাবা প্রারম্ভিক নিয়মাবলীর প্রয়োগ - application of basic opening rules


part 8

প্রারম্ভিক নিয়মাবলীর প্রয়োগঃ


কেন্দ্রের আদর্শ দখল কেমন হতে পারে তার একটা উদাহরন নিচের ছবিতে দেখানো হল।


Ideal center control

উপরের খেলার অবস্থান টি এই সব চাল এর পর আসতে পারেঃ 1.e4 Nc6 2. d4 Nb8 3. Nc3 Nf6 4. Nf3 Ng8 5. Bc4 NC6 6 Bf4 Nb8.. ইত্যাদি। প্রতিপক্ষ কোন বাধা বিপত্তি সৃষ্টি না করলে কি রকম ভাবে ঘূটি বাইরে আনতে হয় এটা তার একটা খুব ভালো উদাহরণ। অবশ্য আসল খেলায় এরকম পজিশন কখনও হবে না। প্রতিপক্ষ কখনও একদম কিছু না করে চুপ করে বসে থাকবে না। তবুও কোনো বাধা সামনে না পড়লে কি ধরনের পজিশন লক্ষ্য করে আমরা সামনে এগোবো সেটা বোঝাবার জন্য উপরের ছবি টি দেখানো হলো।

আর একটা উদাহরণঃ সম্ভাব্য চাল এরকম 1.e4 a5 2. d4 h5 3. Nc3 Na6 4. Nf3 Nh6 5.Bc4 g6 6.Bf4 ইত্যাদি।


2nd player neglects the center

এই পজিশন টা প্রথম পজিশন এর মতো একদম অবাস্তব নয়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় খেলোয়াড় কেন্দ্র কে অবহেলা করেছে এবং সব সেনাবাহিনী মাঠের ধার ঘেষে বার করেছে। প্রথম প্লেয়ার কোনো চালেঞ্জ বা বাধার সম্মুখীন না হওয়ায় কেন্দ্রের আদর্শ দখল প্রতিষ্ঠা করেছে। এককথায়, প্রথম খেলোয়াড় ( এখানে সাদা ঘুটির প্লেয়ার) অনেক ভালো খেলেছে। এই পজিশন আসল খেলায় কখনও আসবে বলে মনে হয়না, তবুও কেন্দ্রের দখল কতটা গুরুত্বপুর্ণ সেটা বোঝাবার জন্য এই ছবিটা দেখানো হলো।

এতক্ষণে আমরা নিশ্চয় বুঝেছি খেলার শুরুতে কেন্দ্রের দখল এর কোনো বিকল্প নেই। আসলে আজকে যে খেলা শিখছে তার থেকে শুরু করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পর্যন্ত এই নিয়ম প্রযোজ্য। খুব বড়ো বড়ো খেলোয়াড় রা কেন্দ্র দখল করার জন্য বিরাট জটিল জটিল সব চাল দেয়। সেসব আমরা পরে একটু আধটু শিখবো। এখন আমাদের লক্ষ্য হল সহজ ভাবে খেলাটা বোঝা ও শেখার চেষ্টা করা।

কেন্দ্রে নিজের দখল প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং প্রতিপক্ষ কে বিনা বাধায় দখল করতে বাধা দেওয়ার জন্য খেলার শুরু থেকেই প্রতিপক্ষ কে কেন্দ্রে চালেঞ্জ করা ভালো। এবং চালেঞ্জ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল বোড়ে এগিয়ে দেওয়া।

তাহলে আমাদের যুক্তি অনুযায়ী সাদার 1. d4 চাল এর পর কালোর ভালো চাল কি?
1...e5 না 1...d5? ভেবে উত্তর দেবার চেষ্টা করুন। উত্তর জানতে চাইলে নিচে পড়তে থাকুন।

উত্তর দেওয়ার আগে দু একটা কথাঃ সাদা প্রথম চাল এর মাধ্যমে সরাররি কেন্দ্রের দখল নেবার চেষ্টা করেছে। সুতরাং এটা ভালো চাল। এর উত্তরে কালোর যুক্তিযুক্ত ভালো চাল হবে পাল্টা কেন্দ্রের দখল নেওয়া। কেন্দ্রের দখল নেওয়ার জন্য কালোর পক্ষে যুক্তিযুক্ত চাল হলো কেন্দ্রের দুটো বোড়ের মধ্যে একটা এগিয়ে দেওয়া। তার জন্য দুটো সম্ভাব্য চাল হলো 1...d5 বা 1...e5। আপনি কোনটা খেলবেন এবং কেন?

1...e5 এর পর বোর্ডের কি অবস্থা হয় একবার দেখা যাকঃ





e5 ঘর টি ইতিমধ্যেই সাদা আক্রমন করেছে, তাই কালোর e5 ঘরের বোড়ে টি সাদা খেয়ে নিতে পারে। সুতরাং কালোর জন্য এটা ভালো চাল নয়। তাহলে ভালো চাল বলতে পড়ে রইলো 1...d5. এতে নিজের সেনা সুরক্ষিত রেখে কেন্দ্রের দখল নেওয়া সম্ভব হলো।

এই প্রসঙ্গে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রাখি। আপনি যখন খেলার শুরুতে সব সেনাবাহিনী খুব দ্রুতগতিতে বাইরে আনবেন তখন খেলার প্রারম্ভিক পর্যায়ের নিয়মাবলী মেনে চলা ভালো, তবে প্রতিপক্ষের চাল এর প্রতি সবসময় নজর দেওয়া উচিৎ। এবং প্রতিপক্ষের চাল আপনার সেনাবাহিনীর জন্য কোনো বিপদ ডেকে আনার চেষ্টা করলে আপনাকে সেই বিপদ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত। যেমন 1.e4 e5 2. Nc3 Bc5 3.Nf3 Qh4 এর পর বোর্ডে ঘূটির অবস্থান লক্ষ্য করুন।





এই পজিশনে কালো সাদার রাজাকে এক চালে কিস্তিমাত এর জন্য তৈরী। হোম ওয়ার্কঃ পরের চালে কোথায় কিস্তিমাত হতে পারে নিজে বোঝার চেষ্টা করুন। উত্তরঃ কিস্তিমাত বোঝার জন্য লাল তীর দেখুন। কিন্তু সাদা ঘোড়া কালো মন্ত্রী কে আক্রমণ করেছে। বোঝার জন্য সবুজ তীর দেখুন। কিন্তু কালোর হাতে কিস্তিমাত করার কোনো সময় নেই, কারন এখন সাদার চাল। তাই কালোর শেষ চাল টি ভালো চাল ছিলো না। লক্ষ্য করুন, শেষ চালে কালো খেলার প্রারম্ভিক নিয়ম এর বিরুদ্ধে চাল দিয়েছে। তাছাড়া, কালো মন্ত্রী এমন ঘরে গেছে যেটা সাদার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এই অবস্থায় চার নম্বর চালে সাদার সবচেয়ে ভালো চাল হলো 4. Nxh4. এতে খেলা শুরুর প্রাথমিক নিয়ম ভাঙ্গা হলো, কিন্তু তাও এটা ভালো চাল, কারন এই চাল এর মাধ্যমে সাদা বিনামূল্যে কালোর মন্ত্রী খেয়ে নিতে পেরেছে। মন্ত্রী সবচেয়ে শক্তিশালী সেনা, তাই এরপর সাদা খেলার বাকি অংশের জন্য খুবই সুবিধাজনক জায়গায় চলে যাবে। ফলে খেলায় সাদার জেতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
খেলার সময় বিপক্ষকে আক্রমণের জন্য কোনো ঘরে চালার আগে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে নিজের ঘুটি নিরাপদ অবস্থানে থাকে। বিপক্ষের নিয়ন্ত্রনে থাকা ঘরে যাওয়া ভালো নয়, কারন তাহলে বিপক্ষ বিনামুল্যে আপনার ঘুটি খেয়ে নিতে পারবে। অনেক সময় দু পক্ষের ই ঘুটি খাওয়া খাওয়ি হয়। এটা এক ধরনের বিনিময় পদ্ধতি। বিনিময় সমান, লাভজনক বা লোকসানের হতে পারে। বিনিময়ের সময় নিজের কম শক্তির সেনা দ্বারা প্রতিপক্ষের বেশি শক্তি খেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। তাহলে খেলার শেষে অবশিষ্ট শক্তির দ্বারা খেলা জিতে নেওয়া সহজ হবে। যেতা সব সময় সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে সমান বিনিময় এর চেষ্টা করা উচিত। নিচের উদাহরণ টি দেখা যাকঃ






1. e4 e5 2. Nf3 (2. Nc3 Bc5 3. Nf3 Qh4) 2... Nc6 3. Nc3 Nf6 4. Bc4 Bc5 5. O-OO-O 6. d3 d6 7. Bg5 Bg4 8. Qd2 Qd7 এর পর দু জনের ই দুর্গ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, রাজা নিরাপদ অবস্থানে পৌছেছে, এবং নৌকা সংযুক্ত, মানে নৌকা একে অন্যের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে। এই অবস্থায় দাবার ভাষায় বলা হয়ে থাকে দুপক্ষের ই সেনাবাহিনীর প্রাথমিক বিকাশ সম্পুর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ, দুই পক্ষই খেলার প্রারম্ভিক ভাগ ভালো ভাবে খেলেছে। আমরা ওপেনিং অতিক্রম করে খেলার মধ্যভাগে প্রবেশ করতে চলেছি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই পজিশনে আমরা প্রত্যেক পরিস্থিতে সবচেয়ে ভালো চাল খোঁজার চেষ্টা করছি না; কিছু ভালো চাল এর মাধ্যমে দাবার মূল ধারণ গুলো বোঝার চেষ্টা করছি মাত্র।

খেলা টি ঠিক এরকম না হয়ে যদি একটু অন্যরকম হতো তাহলে কি রকম অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে একবার চোখ বোলানো যাক। নিচের ছবিটি দেখুনঃ




1. e4 e5 2. Nf3 (2. Nc3 Bc5 3. Nf3 Qh4) 2... Nc6 3. Nc3 Nf6 4. Bc4 Bc5 5. O-OO-O 6. d3 d6 7. Bg5 h6 এর পর বোর্ডে একটা নতুন পজিশন তৈরী হয়েছে। সপ্তম চালে কালো 7...Bg4 এর পরিবর্তে 7...h6 চাল এর মাধ্যমে সাদার g5 ঘরের হাতি কে আক্রমণ করেছে। এখন, একটা বোড়ের মূল্য ১, কিন্তু একটা হাতির মূল্য ৩, কাজেই এই আক্রমণ কে অবহেলা করে সাদা অন্য একটা ঘুটি চালের মাধ্যমে নিজের বিকাশ সম্পুর্ণ করার সুযোগ নেই, কারন তাহলে পরের চালে কালো হাতিকে খেয়ে নেবে। এর ফলে কালো লাভবান হবে। তাই সাদাকে একটা চালের জন্য নিজের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা স্থগিত রেখে অতি শীঘ্র হাতির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। এই অবস্থায় হাতি কে কোনো নিরাপদ ঘরে পিছিয়ে আনা (যেমন 8. Bh4) বা সামনের ঘোড়া খেয়ে নেওয়া (8.Bxf6) ঠিকঠাক চাল হবে। কারন, ঘোড়া ও হাতি দুজনের মুল্য সমান (৩ পয়েন্ট)।
আমার বক্তব্যের প্রাথমিক ধারণা হয়তো এতক্ষণে আপ্ননারা বুঝতে পেরেছেন। কোনো বিশেষ কারন না থাকলে সাধারণ নিয়মাবলী মেনে চলা ভালো। তবে অনেক সময় নিয়ম ভাঙ্গা লাভজনক মনে হলে নিয়ম ভাঙ্গা যেতা পারে। খেলার মূল উদ্দেশ্য হলো খেলা জেতা। তাই খেলা জিততে সাহায্য করে এরকম যে কোনো পরিকল্পনাই ভালো। তবে সাধারণ নিয়মাবলী বহুদিনের বহু খেলোয়াড় এর সাধনার ফসল, তাই নিয়মাবলি অনুসরণ করে সাধারনত ভালো চাল দেওয়া সম্ভব। অনেক সময় অপরিনত খেলোয়াড় ভাবে, তারা এমন একটা মোক্ষম চাল আবিষ্কার করেছে, যেটা সমস্ত নিয়মাবলীর বিরুদ্ধে যায়, কিন্তু প্রচন্ড ভালো চাল। এরকম হওয়া একদম অমূলক নয়, তবে এরকম ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় ওই খেলোয়াড় এর আবিষ্কারে কোথাও গলদ ছিলো। সোজা কথায়, বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে খেলা শেখার শুরুর দিকে বহুদিনের প্রচলিত নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করা বুদ্ধিমানের কাজ।

খলার প্রারম্ভিক ভাগ কিভাবে পরিচালনা করবেন - basic opening rules

part 7

খেলার বিভিন্ন ধাপঃ


দাবা খেলা শুরু হয় সাদার চাল দিয়ে, তারপর কালো, সাদা, কালো এইভাবে চাল দেওয়ার মাধ্যমে খেলা চলে। একটা খেলা কে মোট তিন ভাগে ভাগ করা যায়। খেলার শুরুর দিকের অংশকে opening বা খেলার প্রারম্ভিক পর্যায়, তার পরের অংশকে middlegame বা মধ্য পর্যায় এবং খেলার শেষ অংশ কে endgame বা অন্তিম পর্যায় বলে। 


প্রারম্ভিক পর্যায়ের সাধারণ নিয়মঃ


আমরা এখানে খেলার প্রাথমিক পর্যায় বা ওপেনিং কি ভাবে খেলতে হয় সেই নিয়ে কিছু শিখব। খেলার শুরুতেই যতটা সম্ভব দ্রুতগতিতে সমস্ত সেনাবাহিনী বাইরে এনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া খুব জরুরি। তাহলে প্রথম নিয়ম হলো 

১/নিজের সেনাবাহিনী বাইরে আনুন

২/সেনাবাহিনী দ্রুতগতিতে বাইরে আনুন

৩/যতটা সম্ভব দ্রুতগতিতে বাইরে আনুন


প্রায় একই কথা এতোবার করে বলার কারন কি? কারন খেলার শুরুতে সমস্ত সেনা বাইরে আনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ঘূটি কি ভাবে বাইরে আনা সবচেয়ে ভালো? সেসব নিয়ম এরপর একটু একটু করে শিখবো।

দাবার বোর্ড অনেক বড়, এতে মোট ৬৪ টি ঘর আছে। কিন্তু এর মধ্যে সমস্ত ঘর সমান গুরুত্ত্বপূর্ণ নয়। বোর্ডের বাকি অংশের চেয়ে মধ্যভাগ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই খেলার শুরুতে মধ্যভাগ দখল করার চেষ্টা করা ভালো কৌশল, কারন এতে পরবর্তীকালে খেলায় সুবিধা হয়। দাবা খেলার স্ট্রাটেজি অনেকটা ফুটবলের মতো। ফুটবলেও মাঝমাঠ যার দখলে খেলার উপর তার কন্ট্রোল বেশি। মাঝমাঠ নিজের দখলে থাকলে প্রয়োজনে নিজের সেনাবাহিনী খুব তাড়াতাড়ি মাঠের কোনো একটা পাশে সরে যেতে সুবিধা হয়। প্রতিপক্ষ অনেক সময় এই গতির সাথে তাল মেলাতে না পেরে ঠিকমত রক্ষণ সামলাতে পারে না। এবং মাঝমাঠ নিজের দখলে থাকলে প্রতিপক্ষের অনুরূপ আক্রমন কে সহজে প্রতিহত করা সুবিধা হয়। দাবার মাঝমাঠ এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা টি নিচের বোর্ডে দেখানো হলো। d4, d5, e4, e5 এই চারটে ঘর বোর্ডের একদম কেন্দ্রে আছে, তাই এই ঘরগুলো দখল করতে পারলে খেলার প্রারম্ভিক ভাগ সফল। 
তাহলে পরবর্তী নিয়ম হলোঃ


৪/ মাঝমাঠ দখল করুন


কিন্তু মাঝমাঠ কি ভাবে দখল করবো? সবচেয়ে স্বাভাবিক উপায় হলো বোড়ে দিয়ে দখল করা। তাহলে এই নিয়ম অনুযায়ী কোন প্রথম চাল টা সবচেয়ে ভালো? উত্তরঃ 1.e4 বা 1.d4. এর বদলে 1.h4 বা 1.a4 চাল দেওয়া হলে বোর্ডের কেন্দ্র বা মাঝমাঠ দখল করা হয় না, তাই এই চালগুলো ভালো নয়।

খেলার শুরুর দিকে খুব বেশি বোড়ের চাল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। বোড়ে একবার সামনে এগিয়ে গেলে আর কখনও পিছনে আস্তে পারে না। তাছাড়া একা বোড়ে সামনে এগিয়ে গেলে বিপক্ষ সময় বুঝে একা এগিয়ে যাওয়া বোড়ে কে সহজেই আক্রমণ করবে। এতে বিপক্ষের সুবিধা। প্রথম প্রথম খেলা শিখলে খেলার শুরুতে শুধুমাত্র রাজা এবং মন্ত্রীর সামনের বোড়ে দুটো চালুন। অকারনে আর কোনো বোড়ে চাল দেওয়ার দরকার নেই। অন্যভাবে বলতে গেলে, দুটো হাতি বাইরে আনতে সর্ব্বনিম্ন যে পরিমাণ বোড়ের চাল দরকার শুরুতে তার বেশি বোড়ের চাল দেওয়া ভাও নয়। 

তাই মাঝমাঠ দখল করার লক্ষ্য নিয়ে পুরো খেলা পরিচালনা করা উচিৎ। কিন্তু শুধুমাত্র বোড়ে দিয়ে খেলা ভালো কৌশল নয়, তাই বোড়ের সাথে সাথে অনান্য সেনাবাহিনী ও বাইরে নিয়ে এসে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। অনান্য ঘুটির মধ্যে হাতি/ঘোড়া সবার আগে বাইরে আনা ভালো। তাহলে আমাদের পরের নিয়ম টি হলোঃ


/ অনান্য ঘুটি (হাতি/ঘোড়া) বাইরে নিয়ে আসুন।


কিন্তু কোন ঘুটি সবার আগে বাইরে আনা ভালো? ছোটো ঘুটি বা মাইনর পিস বাইরে এনে খেলা শুরু করা ভালো কৌশল। ছোটো ঘুটি বলতে এখানে গজ বা ঘোড়া বোঝাচ্ছি। হাতি একচালে অনেকদূর অবধি যেতে পারে, কিন্তু ঘোড়া পারে না, তাই হাতির সম্ভাব্য চাল এর সংখ্যা বেশি। একদম শুরুতেই হাতির জন্য সবচেয়ে ভালো চাল বুঝতে অনেক সময় একটু সমস্যা হয়, তাই প্রথমে ঘোড়া বাইরে এনে তারপর সুযোগ বুঝে হাতির চাল দেওয়া ভালো। তাহলে আমাদের পরের নিয়ম টি হলোঃ


৬/ সাধারনত প্রথমে ঘোড়া তারপর হাতি বাইরে আনা ভালো।


খেলার শুরুতে ঘোড়া/হাতি বাইরে আনতে বলেছি, এবং মন্ত্রী বা নৌকা বাইরে আনতে বারণ করেছি। কিন্তু ক্যানো? এর কারন, একদম শুরুতেই বড় ঘুটি যেমন নৌকা বা মন্ত্রী বাইরে আনা খারাপ। এতে বিপক্ষ বাইরে আসা মন্ত্রী কে বারবার আক্রমণ করে নিজের ঘুটি কে বাইরে বার করবে, আর ছোটো ঘুটির হাতে মারা যাওয়ার ভয়ে মন্ত্রী সারা বোর্ড জুড়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে জেতে বাধ্য হবে। অনেক সময় অনেক ছোটো ঘুটির মধ্যে মন্ত্রী বন্দি হয়েও যেতে পারে। মন্ত্রী সবচেয়ে শক্তিশালী, তাই অন্য কোনো ঘুটির বদলে মন্ত্রী খাওয়া গেলে সেটা লোকসান। তাহলে পরের নিয়ম টা দাঁড়ালোঃ


৭/খেলার একদম শুরুতেই বড় শক্তি মন্ত্রী বাইরে আনবেন না।


খেলায় রাজার নিরাপত্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারন রাজা কে কিস্তিমাত করা সম্ভব হলে খেলা সমাপ্ত হয়। বোর্ডের মধ্যভাগে রাজা সবচেয়ে নিরাপদ নয়, তাই সাধারণত খেলার শুরুতে কাসলিং এর মাধ্যমে রাজা কে কোনো এক প্রান্তে রাখা হয়। ৭ থেকে ১০ চাল এর মধ্যে কাসলিং এর চেষ্টা করুন। রাজার দিকে কাসল করতে কম সময় লাগে, তাই সাধারনত রাজার দিকে কাসল করা ভালো। রাজার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সাধারণত রাজার সামনের বোড়ে অকারনে চালা উচিৎ নয়। কারন বোড়ে রাজাকে বিপক্ষের আক্রমণের হাত থেকে নিরাপত্তা প্রদান করে। তাহলে পরের নিয়মঃ


৮/যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাসল করে রাজার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন। 


এখনও পর্যন্ত যতগুলো নিয়ম বলেছি সেগুলো মেনে চলা ভালো। তবে সমস্ত নিয়ম মেনে নিজের সেনাবাহিনীর বিকাশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা উচিত। তাই অকারনে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। প্রত্যেকটা ঘুটি কে একটা মাত্র চালের মাধ্যমে সবচেয়ে ভালো ঘরে নিয়ে যাওয়া উচিত। কারন, একই জায়গায় পোছতে একটার বদলে দুটো চাল দিলে অনর্থক সময় নষ্ট হয়। তাহলে পরের নিয়মটি দাঁড়ালোঃ


৯/ খেলার শুরুতে কোনো নির্দিষ্ট কারন ছাড়া একটা ঘুটি একবার এর বেশি চালবেন না।


সেনাবাহিনী বাইরে আনার সময় একটা পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং সেই পরিকল্পনা মাফিক খেলা কে এগিয়ে নিয়ে যান। প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা বোঝার চেষ্টা করুন এবং সাধ্যমত সেই পরিকল্পনা প্রতিহত করার চেষ্টা করুন।

১০/ পরিকল্পনা মাফিক খেলুন এবং প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা বোঝার চেষ্টা ও প্রতিহত করার চেষ্টা করুন।

এই সব নিয়ম মেনে চললে প্রারম্ভিক পর্যায়ের পর খুব শীঘ্রই (৭- ১০ চাল) দেখতে পাবেন সব ঘুটি সুন্দরভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে এবং দুটো নৌকা একে অপরের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে। দুটো নৌকার সংযোগ সফল হলে আপনার প্রারম্ভিক পর্যায়ের খেলা সফল হয়েছে বলা যায়। 

খেলার প্রারম্ভিক পর্যায়ের প্রাথমিক নিয়মাবলী এখানেই সম্পুর্ণ হলো। এর পরের লেখায় উদাহরণ সহযোগে নিয়মগুলোকে ব্যখ্যা করবো।

কিস্তিমাত করার কিছু সহজ উদাহরণ - some examples of basic checkmates

part 6

কিছু সহজ কিস্তিমাত এর উদাহরণঃ

রাজা ও মন্ত্রী দিয়ে কিস্তিমাতঃ

আজকের লেখায় একটা খুব সহজ কিস্তিমাত শেখাবো। চলুন রাজা ও মন্ত্রী দিয়ে শুধু রাজা কে কিভাবে কিস্তিমাত করতে হয় তা শিখি। 

যারা দাবা কিছুদিন খেলছেন তারা হয়তো রাজা ও মন্ত্রী নিয়ে কিস্তিমাত করতে জানেন, তাই আপনারা এই লেকচার থেকে বেশি কিছু শিখবেন না, তবে নতুন খেলোয়াড় হলে আপনাকে এই কিস্তিমাত শিখতেই হবে। নয়তো আপনি অনেক জেতা খেলা জিততে পারবেন না। লেকচার টা পড়ার পর কয়েকবার কোনো বন্ধুর সাথে বা নিজে কয়েকবার অভ্যাস করে নিন। এখবার শিখে গেলে সারা জীবন ভুলবেন না।

অনেক সময় একটা অনেক লম্বা খেলার শেষে একপক্ষের শুধু রাজা পড়ে থাকে। অন্য পক্ষের পড়ে থাকে রাজা ও মন্ত্রী। মন্ত্রী খুব শক্তিশালী, তাই যে পক্ষের মন্ত্রী থাকে তার অবস্থা অনেক ভালো, কিন্তু অবস্থা ভালো হলেই আপনা থেকে খেলায় জয়ী হওয়া যায় না। জিততে গেলে প্রতিপক্ষের রাজাকে কিস্তিমাত করতে জানতে হবে। কিস্তিমাত করতে না পারলে অনেক বেশি শক্তি নিয়েও জেতা যায় না। তাই কিস্তিমাত করতে শেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

মন্ত্রী খুব শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও একা কিস্তিমাত করতে পারে না। প্রতিপক্ষকে কিস্তিমাত করতে গেলে আপনাকে রাজা ও মন্ত্রী কে একসাথে ব্যবহার করা শিখতে হবে। চলুন ধাপে ধাপে শিখি।


রাজা ও মন্ত্রী দিয়ে কিস্তিমাত অনেক রকম ভাবে হতে পারে। সবচেয়ে সহজ কিস্তিমাত কেমন হতে পারে তার কিছু উদাহরণ নিচে দেখানো হলো। 


যদি রাজা বোর্ডের প্রান্তে থাকেঃ






কিস্তিমাত করার জন্য মন্ত্রীর দুটো সম্ভাব্য চাল দেখানো হয়েছে। এছাড়া অন্য চাল দিয়েও একচালে কিস্তিমাত করা সম্ভব। ভাবুন, সহজেই উত্তর পেয়ে যাবেন।

উপরের ছবি থেকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখতে পারি। কিস্তিমাত করার জন্য কালো রাজা কে বোর্ডের একপ্রান্তে বন্দী করা খুব সহজ।

পরের ছবিটা দেখুনঃ

যদি রাজা বোর্ডের মাঝখানে থাকেঃ

কালো রাজা বোর্ডের একদম প্রান্তে নেই, মাঝামাঝি রয়েছে। এই অবস্থায় রাজাকে সহজে কিস্তিমাত করার চেষ্টা করে দেখুন। দেখবেন কোনো সহজ উপায় নেই। খুব কঠিন।

তাহলে আমরা জানলাম কালো রাজাকে কিস্তিমাত করতে হলে বোর্ডের একপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া বেশ ভালো। তারপর রাজা কে একপ্রান্তে কিভাবে কিস্তিমাত করতে হয় তা আমরা এর মধ্যেই লেকচার এর শুরুতে শিখে নিয়েছি। শুধু রাজা কে একপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারলেই হলো। কিন্তু রাজা কে একপ্রান্তে কিভাবে নিয়ে যাবো?



প্রথমে কোনো পরিকল্পনা ছাড়া কালো রাজা কে মন্ত্রী দিয়ে কিস্তি দিয়ে দেখুন। সম্ভাব্য চালঃ

1. Qb4+ Kd5 2.Qb5+ Kd4 3.Qb4+ Kd5 
বা
1.Qe2+ Kd4 2.Qd2+ Ke4 3.Qe2+ Kd4

ইত্যাদি।

শুধু কিস্তি দিয়ে চাল নষ্ট করা ছাড়া সাদা একটুও উন্নতি করেনি। এভাবে খেললে জেতা যাবে না। আসলে এভাবে কিস্তি দিয়ে লাভ নেই, তার চেয়ে কালো রাজার থেকে আস্তে আস্তে একটা একটা করে ঘর কেড়ে নেওয়া ভালো। এতে একটু একটু করে কালো রাজা বোর্ডের প্রান্তে পৌছে যাবে। কি ভাবে তা করা সম্ভব তা নিচে শেখাবো।

শুধু মন্ত্রী দিয়েই কালো রাজাকে একপ্রান্তে ঠেলে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ। পদ্ধতিটা এখানে শিখিয়ে দিচ্ছি। মন্ত্রীকে নিরাপদে যতটা সম্ভব বোর্ডের মাঝে কালো রাজা থেকে ঘোড়ার দূরত্বে বসান, এবং কালো রাজা নতুন ঘরে চলে যাবার পর আবার নতুন করে মন্ত্রীকে ঘোড়ার দুরত্বে বসান। নিচের ছবি দেখুনঃ



এতে কালো রাজা একটা ছোটো বোর্ডের (সবুজ দেওয়াল) মধ্যে বন্দি হয়েছে। এবং এই সবুজ দেওয়াল কে আমরা ধীরে ধীরে আরো ছোটো করবো। যেমন, 
1...Kd5 2.Qb4!



2...Kc6 3.Qd4! 

or

2...Ke5 3.Qc4!

এইভাবে একসময় কালো রাজা একদম প্রান্তের সারিতে চলে যাবে। এবং মন্ত্রী প্রান্ত থেকে দ্বিতীয় সারিতে থাকবে। যেমনঃ


কালো রাজা বোর্ডের প্রান্তে, এখনো ঘোড়ার দূরত্ব।
এই অবস্থায় চাইলে কালো রাজা কে একদম কোনায় ঠেলে নিয়ে যেতে পারেন, তবে স্টেলমেট সম্বন্ধে সতর্ক থাকবেন।


সবুজ ঘরে সাদা মন্ত্রী চাললে স্টেলমেট হবে, তাই এটা খুব বাজে চাল।



এবার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে। কিস্তিমাতের জন্য সাদা রাজার সাহাজ্য দরকার। সাদা রাজাকে বোর্ডের অপর প্রান্ত থেকে কালো রাজার কাছাকাছি নিয়ে আসুন। এইসময় কালো রাজার কোনার দুই ঘরের মধ্যে বারবার চালা ছাড়া কিছু করার নেই। রাজা আনা হলে এরকম অবস্থা হবেঃ


একদম প্রথম ছবির মতো। পরের চালে কিস্তিমাত।
এবার কিস্তিমাত করুন।



সংক্ষেপে K+Q vs K..plan


১/ মন্ত্রীর সহায়তায় বিপক্ষেরে রাজা কে বোর্ডের একপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া, ন

২/ সাদা রাজা কে কালো রাজার কাছে নিয়ে আসা

এবং

৩/সুবিধাজনক অবস্থায় কিস্তিমাত করার মোক্ষম চাল দেওয়া।ন

এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যাতে বিপক্ষের রাজা্র চাল এর অভাবে ড্র [stalemate] না হয়। 

উপরের উদাহরণ টি কিস্তিমাত এর সহজতম উদাহরণ গুলোর মধ্যে একটা। কিন্তু তাতেও আমরা দেখলাম দীর্ঘমেযাদী পরিকল্পনা কেন দরকার। পরিকল্পনা মাফিক খেললে কিস্তিমাত করা খুব সহজ। কঠিন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা আরও নিশ্ছিদ্র হওয়া প্রয়োজন। কঠিন পরিস্তিতি কি ভাবে সামলাতে হয় সেসব আমরা পরে শিখবো।


রাজা ও নৌকা দিয়ে রাজাকে কিস্তিমাতঃ

নৌকা মন্ত্রীর চেয়ে অনেক কম শক্তিশালী, কারন নৌকা কেবল সোজাসুজি রেলগাড়ির মতো চলতে পারে, ফলে বোর্ডের মাঝে থাকা নৌকা কেবল চার দিকে চলে, মন্ত্রীর মতো আট দিকে চলতে পারে না। তাই নৌকা ও রাজা দিয়ে রাজাকে কিস্তিমাত করা অনেক বেশি কঠিন। কিন্তু খেলায় জিততে গেলে নৌকা দিয়ে কিস্তিমাত করা শেখা আবশ্যক, কারন অনেক সময় একটা খেলার শেষে শুধু নৌকা থাকে, তাই কিস্তিমাত করতে না জানলে খেলা জেতা যাবে না। 

এইসব সহজ কিস্তিমাত শেখার আর একটা ভালো দিক আছে। কিস্তিমাত শেখার মাধ্যমে আমরা কি ভাবে মন্ত্রী বা নৌকা ব্যবহার করা যায় তা শিখছি। একটা ঘুটি ব্যবহার করা শিখে গেলে তারপর আমরা একাধিক ঘুটি একসাথে ব্যাবহার করা শিখবো। 

চলুন তাহলে শেখা যাক। রাজা ও মন্ত্রী দিয়ে একটা কিস্তিমাতের উদাহরণ নিচে দেওয়া হলোঃ

সাদার চাল। একচালে কিস্তিমাত।

কিস্তিমাতের সাধারণ পদ্ধতিতে আগের লেকচারের (লেকচার ৪, মন্ত্রী দিয়ে কিস্তিমাত) সাথে বেশ কিছুটা মিল আছে। 

প্রথম ধাপে রাজাকে একপ্রান্তে ঠেলে নিয়ে যেতে হবে, কিন্তু শুধুমাত্র নৌকা দিয়ে তা সম্ভব নয়, কারন কালো রাজা সাদা নৌকা কে আক্রমণ করতে পারে। সুতরাং রাজা ও নৌকা মিলে দলগতভাবে খেলতে হবে। কি ভাবে খেলা এগোবে তা আমরা নিচে শিখবো।

সাদার চাল। কিস্তিমাতের প্রথম ধাপ কি?


কোন পরিকল্পনা ছাড়া নৌকা দিয়ে কিস্তি দিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এক্ষেত্রেও খালি কিস্তি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। তার বদলে বোর্ড কে দুভাগে ভাগ করে কালো রাজাকে একটা ভাগের মধ্যে বন্দি করা দরকার। তাহলে প্রথম চাল 1.Ra4!!


কালো রাজা সবুজ লাইন পেরোতে পারবে না।

তারপর রাজাকে এগিয়ে আনুন। এই অবস্থায় কালো রাজা আপনার নৌকার দিকে আক্রমণ করতে আসবে। নৌকা আক্রান্ত হবার আগে অবধি রাজাকে এগিয়ে আনুন।

তাহলে সম্ভাব্য চাল হতে পারে এরকম

1...Kd5 2.Kg2 Kc5 3.Kf3 Kb5


সাদা নৌকা আক্রান্ত। কিন্তু সাদার চাল। নৌকা দূরে সরে যাবে।
কালো রাজা সাদা নৌকা কে আক্রমণ করেছে। তাই নৌকা কে নিরাপদ কোথাও নিয়ে যাবার জন্য একটা চাল খরচ করুন। 

4.Rh4!  

নৌকা কে চতুর্থ র‍্যাঙ্ক বরাবর দূরে নিয়ে যান, যাতে কালো রাজা সবুজ লাইন পেরোতে না পারে। 

তারপর আমরা আবার আমাদের পরিকল্পনা মাফিক এগোবো। সাদা রাজা কে কালো রাজার কাছে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে

4...Kc5 5.Ke3 Kd5


দরকারি পজিশন। দুই রাজার মধ্যে ঘোড়ার দূরত্ব।

দুই রাজার মধ্যে ঘোড়ার দূরত্ব তৈরী হলে রাজা চালবেন না। নৌকার কোনো চালের মাধ্যমে একটা চাল নষ্ট করুন। দুই রাজার মধ্যে ঘোড়ার দূরত্ব থাকা অবস্থায় আপনি চাইবেন কালোর রাজার চাল হোক। তাহলে

6.Rg4! 

এবার কালো রাজা যদি নৌকার দিকে আসে তাহলে দূই রাজা মুখোমুখি আসে তাহলে আমরা কিস্তি দেবো, এবং কালো রাজা আরও পিছন দিকে সরে যেতে বাধ্য হবে। যেমন, 

6...Ke5 7.Rg5+


কালো রাজা পিছনে সরে যেতে বাধ্য।

আর যদি কালো রাজা উলটো দিকে পালায় তাহলে আমরা ঘোড়ার দূরত্ব বজায় রেখে রাজা চালবো। তাহলে

6...Kc5 7.Kd3 Kb5 8.Kc3 Ka5 9.Kb3


কালো রাজাকে সাদা রাজার সামনে আসতে হবে। এবং পরের চালেই কিস্তি।
কালো রাজা আর দূরে পালাতে পারবে না, কারন বোর্ডে আর জায়গা নেই, রাজা উল্টোদিকে এলেই দুই রাজা সামনাসামনি এসে পড়বে। তখন আমরা কিস্তি দেবো। এবং রাজা পিছিয়ে যাবে। 

9...Kb5 10.Rg5+ Kc6 


সাদা রাজাকে সামনে এগিয়ে ঘোড়ার দূরত্বে নিয়ে যান।
আমরা আবার সাদা রাজাকে ঘোড়ার দূরত্বে নিয়ে যাবো। তাহলে সঠিক চাল হলোঃ

11.Kb5!

আমরা একধাপ এগিয়ে গেছি। এবার আবার আগের পদ্ধতি প্রয়োগ করে একধাপ একধাপ করে কালো রাজা কে বোর্ডের প্রান্তে নিয়ে যেতে পারবো। 

বাকিটা আপনাদের প্রাকটিস এর জন্য রেখে দিলাম।

শেষধাপ কি ভাবে খেলবেন তা এবার শেখাই।


রাজা একদম প্রান্তে। কালোর চাল হলে কি হবে? সাদার চাল হলে কি হবে?

ধরা যাক এই অবস্থায় কালোর চাল। কালো রাজা যদি নৌকার দিকে আসতে চেষ্টা করে তাহলে দুই রাজা সামনাসামনি এসেছে, সুতরাং নৌকা দিয়ে কিস্তি, এবং এবার কিস্তিমাত হয়েছে, কারন রাজার পিছনে কোনো জায়গা নেই। আর যদি রাজা দূরে পালায় তাহলে আপনার রাজা এগিয়ে নিয়ে যান, ঘোড়ার দূরত্ব বজায় রেখে। তাহলে

1...Kc8 2.Kd6 Kb8 3.Kc6 Ka8 4.Kb6 

কালো রাজার আর পালাবার জায়গা নেই, তাই রাজার সামনে আসতেই হবে। এবং

4...Kb8 Rh8#

আর বোর্ডের অবস্থায় যদি সাদার চাল হয় তাহলে কি ভাবে খেলবেন? সাদা রাজাকে কালো রাজার সামনে নিয়ে গিয়ে লাভ নেই, কারন পরের চালে কালো রাজা কোনো একটা পাশে পালাবে। সুতরাং আপনাকে একটা চাল নষ্ট করতে হবে। সুতরাং

1.Rg7!!

এবার কালো রাজাকে চাল দিতেই হবে। কারন খেলার নিয়ম অনুযায়ী পাশ দেওয়া যায় না। এরপর আগের পদ্ধতি অনুযায়ী খেলুন, জিতে যাবেন।

কালোর রাজার পক্ষে ইচ্ছেমতো চাল দেওয়া বা পাশ দেওয়া সম্ভব কালো রাজা সবসময়েই পালাতে পারতো, সাদা কিস্তিমাত করতে পারতো না, এবং খেলা জিততে পারতো না। খেলার শেষের দিকে প্রয়োজনে চাল নষ্ট করা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা এখন শুধু মাথায় রাখুন,পরে অনেক কিছু শিখতে এই ধারনা কাজে লাগবে।

তাহলে, সংক্ষেপে বললে, এক্ষেত্রেও কালো রাজা যদি বোর্ডের মাঝে থাকতো তাহলে কিস্তিমাতের পরিকল্পনা মন্ত্রী দিয়ে কিস্তিমাতের মতোই, তবে রাজার সাহায্য দরকার।

১/ রাজা এবং নৌকার সহায়তায় বিপক্ষেরে রাজা কে বোর্ডের একপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া। কোনো কোনায় নিয়ে যেতে পারলে সবচেয়ে ভালো। 
এবং
২/সুবিধাজনক অবস্থায় কিস্তিমাত করার মোক্ষম চাল দেওয়া। 

তবে মন্ত্রীর চেয়ে নৌকা কম শক্তিশালী, তাই খেলাটা একটু অন্যরকম হবে। লক্ষ্য করুন, মন্ত্রী কে বিপক্ষের রাজা সরাসরি আক্রমণ করতে পারে না, কিন্তু নৌকা কে আক্রমণ করতে পারে। তাই নৌকা দিয়ে কিস্তিমাত এর সময় রাজার সহায়তা অনেক বেশি দরকার।

মন্ত্রী এবং নৌকার সহায়তায় কিস্তিমাতঃ


আর একটা খুব সহজ কিস্তিমাত এর উদাহরণ দিয়ে আমরা এই লেখাটি শেষ করবো। শক্তিশালী পক্ষের যদি একটা মন্ত্রী এবং একটা নৌকা অবশিষ্ট থাকে তবে রাজার সাহাজ্য ছাড়াই খুব সহজে কিস্তিমাত করা যায়।


step ladder

উপরের ছবিতে মন্ত্রী এবং নৌকা মিলে খুব সহজে বিপক্ষের রাজা কে কিস্তিমাত করতে পারে। কালো রাজার যেকোনো নিয়মমাফিক চালের জন্য তীর অনুযায়ী 1.Re4, 2.Qd3, 3.Rc4, 4.Qb3, 5. Ra4 ইত্যাদি চাল গুলো পরপর খেললে কিস্তিমাত হবে। এখানে কালো রাজার কিছুই করার নেই কারন সাদার মন্ত্রী এবং নৌকা একে অপরকে রক্ষা করছে, এবং কালো রাজা কে আসতে আসতে বোর্ডের একপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। এই ধরনের কিস্তিমাত এর পদ্ধতিকে সংক্ষেপে step-ladder [সিড়ি ভাঙ্গা?] বলে। 

সিড়িভাঙ্গা পদ্ধতির দুটো ধাপঃ 
১/ রাজা কে দূরে সরিয়ে নিন, যাতে মন্ত্রী ও নৌকা বিপক্ষের রাজা কে সরাসরি দেখতে পায়। 
এবং
২/ মন্ত্রী ও নৌকা পাশাপাশি এনে সিড়িভাঙ্গা পদ্ধতিতে চাল দিন।

মন্ত্রী ও নৌকার বদলে দুটো মন্ত্রী দিয়েও step-ladder পদ্ধতিতে খুব সহজে কিস্তিমাত সম্ভব। দুটো নৌকা দিয়ে কিস্তিমাত করার চেষ্টা করলে কি হবে সেটা নিজে চেষ্টা করে দেখুন।

আসল খেলায় ভালো ফল করার জন্য এরকম দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বোঝা এবং বারবার প্রাকটিস করা আবশ্যক। কেননা অনেক খেলার শেষেই একজনের একটা বা দুটো বোড়ে অবশিষ্ট থাকে, এবং বোড়ে থেকে নতুন মন্ত্রী বানিয়ে নেওয়া যায়। একবার মন্ত্রী বানানো হয়ে গেলে পরের ধাপ সহজ। শুধু কিস্তিমাত এর সহজ উপায় গুলো শেখা থাকলেই হবে। আশা করি এই লেখা সেই পথে আপনাদের কিছুটা সাহাজ্য করবে। 

এর পরের লেখায় আমরা কি ভাবে পুরো খেলা পরিচালনা করতে হয় শেখা শুরু করবো। 

দাবা ঘুটির আপেক্ষিক মূল্য - relative value of chess pieces

Part 5

ঘুটির আপেক্ষিক মূল্য নির্ধারণঃ

এতদিনে আমরা নিশ্চয় বুঝেছি সব ঘুটির মূল্য সমান নয়। প্রত্যেক ঘুটির মূল্য বাকি ঘুটির চেয়ে আলাদা। তাই কোন ঘুটির কেমন শক্তি তা সম্বন্ধে ধারণা থাকা দরকার। মন্ত্রী সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বোড়ে সবচেয়ে কম শক্তিশালী। বোড়ের মূল্য ১ ধরে বাকিদের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। নিচে বিভিন্ন ঘুটির তুলনামূলক মুল্য দেওয়া হলঃ 


বোড়ে = ১

গজ বা হাতি = ৩

ঘোড়া = ৩

নৌকা = ৫

মন্ত্রী = ৯



বিনিময় এর সোজা হিসাবঃ


সংক্ষেপে বলতে গেলে, দুটি নৌকা একটা মন্ত্রীর চেয়ে শক্তিশালী কারন দুটি নৌকার মূল্য ১০ এবং মন্ত্রীর মূল্য ৯, এবং দুটি হাতি বা ঘোড়া নৌকার চেয়ে শক্তিশালী দুটি হাতি বা ঘোড়ার সম্মিলিত মূল্য ৬, কিন্তু একটা নৌকার মূল্য ৫। 


একটা নৌকা ৫ টা বোড়ের সমান। একটা মন্ত্রী তিনটি হাতি বা ঘোড়ার সমান, বা ৯ টা বোড়ের সমান। একটি হাতি বা ঘোড়া তিনটি বোড়ের সমান। একটা নৌকা একটি ঘোড়া বা গজ এবং দুটি বোড়ের সমান। ৫ = ৩+১+১

বেশী শক্তিশালী হওয়ার জন্য মন্ত্রী এবং নৌকা কে বড় ঘুটি [major pieces] এবং হাতি এবং ঘোড়া কে ছোট ঘুটি [minor pieces] বলা হয়।


রাজার মূল্যঃ


রাজাকে অমূল্য ধরা হয় কারণ রাজা কে কোনো অবস্থাতেই বিনিময় করা যায় না। রাজা সাধারনত খেলার সময় যুদ্ধের অংশগ্রহণ করে না, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে নিরাপদ অবস্থানে লুকিয়ে থাকে, কারন রাজার মৃত্যুর সাথে সাথে খেলার সমাপ্তি হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে পারেন, মন্ত্রী সবচেয়ে শক্তিশালী ঘুটি, কিন্তু রাজা সবচেয়ে মূল্যবান ঘুটি।


বিনিময় সংক্রান্ত কিছু কঠিন তথ্যঃ

এই বিভাগ টা বাকি বিভাগের চেয়ে অনেক কঠিন। খুব জটিল মনে হলে এই অংশ টা এখন না পড়লেও চলবে। আরও খানিকটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর পড়তে পারেন। তবে শেষাংশ টা খুব দরকারী, ওটা বাদ দেবেন না।

হিসাবের সুবিধার্তে ১,৩,৩,৫,৯ নিয়মে গণনা করা হয়। তবে মাথায় রাখতে হবে, এই সব মূল্য খেলার সময়ে ঘুটির অবস্থানের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। তাই সব সময় ঘুটির অবস্থান বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। 
একটা ঘুটির আসল মূল্য বোর্ডের কোথায় আছে আর কি রকম ভাবে কতটা কাজ করছে তার উপর নির্ভর করে। তাই কোনো বিশেষ অবস্থায় কোনো ঘুটির দাম কম বা বেশি হতে পারে।

যেমন, কোনো বোড়ে বোর্ডের শেষ মাথায় পৌছে গেলে মন্ত্রী হয়ে যেতে পারে, সুতরাং বোড়ের শক্তি অনেকগুণ বৃদ্ধি পায় [১ থেকে ৯ ], সুতরাং অষ্টম ঘরের কাছাকাছি পৌছে যাওয়া বোড়ে ১ পয়েন্ট এর চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী, ইত্যাদি।

যারা একদম নতুন খেলা শিখছেন তাদের মনে হতে পারে ঘোড়া খুব শক্তিশালী, কারন ঘোড়া অদ্ভুতভাবে বোর্ডে চলাফেরা করে। ঘোড়ার চলন বাকি সবার চেয়ে একদম আলাদা। কিন্তু অভিজ্ঞতার সাথে সাথে ঘোড়ার চাল কে মোকাবিলা করতে শেখা যায়। গ্রান্ডমাস্টার দের খেলায় বেশিরভাগ সময় গজ কে ঘোড়ার চেয়ে বেশি শক্তিশালী মনে হয়। সুতরাং ঘুটির মূল্য আপেক্ষিক।

কোনো পজিশন একদম বদ্ধ (blocked) হয়ে থাকলে সাধারণত ঘোড়া গজ এর চেয়ে বেশি কাজে লাগে, কারন ঘোড়া সহজেই বাধা ডিঙিয়ে চলাফেরা করতে পারে। অপরপক্ষে বোর্ড একদম খোলা (open) থাকলে গজ এর অনেক দূর অবধি যাবার ক্ষমতা বেশি দরকারি মনে হয়। তাই বোর্ডের ঘুটি কমতে থাকলে সাধারণত ঘোড়ার শক্তি কমতে থাকে। 

একটা ঘোড়া ও একটা গজ প্রায় সমান শক্তিশালী, কিন্তু দুটো গজ (bishop pair) প্রায় সব সময় দুটো ঘোড়ার চেয়ে শক্তিশালী। এর প্রধান কারন হলো, দুটো গজ দিয়ে বোর্ডের সমস্ত ঘর কভার করা যায়, কিন্তু একটা গজ দিয়ে কেবলমাত্র অর্ধেক ঘর কভার করা যায়। অর্থাৎ, দুটো গজ = একটা গজের মূল্য * ২ + কিছু টা অতিরিক্ত মূল্য। বলা হয়, একটা গজ = ৩, দুটো = ৬,৫

খেলার শুরুতে অনেক সময় একটা ঘোড়া ও গজের বদলে প্রতিপক্ষের একটা নৌকা ও একটা বোড়ে খেয়ে নেবার সুযোগ তৈরী হয়। যদিও পয়েন্টের হিসাবে দু'দল ই সমান, তবুও খেলার শুরুর দিকে সাধারণত দুটো ঘুটি নৌকা ও বোড়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। ঘোড়া + গজ = ৩+৩, নৌকা+বোড়ে = ৫+১ , কিন্তু খেলার শুরুর দিকে ঘোড়া ও গজ বেশি শক্তিশালী।

খেলার শুরুর দিকে নৌকার দাম কম মনে হয়, কারন অনেক ঘুটির মধ্যে নৌকা ব্যবহার করা কঠিন। বোর্ড খালি হবার সাথে সাথে সাধারণত নৌকার শক্তি বৃদ্ধি পায়।

এছাড়া আরও কিছু কঠিন ব্যাপার আছে। যেমন, নৌকা ও গজ এর মিলিত শক্তি প্রায় সবসময় নৌকা ও ঘোড়ার চেয়ে বেশি। দুজনের ই পয়েন্ট সংখ্যা কিন্তু সমান। ৫ + ৩ বা ৮ 

আবার, মন্ত্রী ও ঘোড়ার মিলিত শক্তি প্রায় সব সময় মন্ত্রী ও গজ এর চেয়ে বেশি। এবার ও পয়েন্ট সংখ্যা সমান। ৯ + ৩ বা ১২

সংক্ষেপে, সাধারণত মন্ত্রীর সাথে ঘোড়া এবং নৌকার সাথে গজ মিলিতভাবে ভালো কাজে লাগে। 

তবে, বোর্ডে কোনো বিশেষ অবস্থায় কে বেশি শক্তিশালী হবে তা নিয়ম করে বলা কঠিন। এমনকি গ্রান্ডমাস্টার রাও প্রায় ই এদের আপেক্ষিক মূল্য বুঝতে ভুল করেন, বা অনেক জটিল পরিস্থিতিতে দুজন গ্রান্ডমাস্টার সম্পুর্ণ বিপরীত মত পোষণ করেন। তাই ধ্রুব সত্য বলে কিছু নেই। প্রায় সব নিয়মের ব্যতিক্রম আছে। তবে বহুল প্রচলিত ধারণা সম্বন্ধে জেনে রাখা ভালো।


১,৩,৩,৫,৯ হিসাব কি ভাবে ব্যবহার করবেনঃ

খেলার শুরুতে দুজন খেলোয়াড় এর ই সমান শক্তি থাকে। খেলা চলাকালীন দুজনের শক্তি বিনিময় হতে থাকে। খেলার সময় এমনভাবে খেলতে হবে যাতে খেলা এগোবার সাথে সাথে প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজের পক্ষের বেশি সেনা অবশিষ্ট থাকে। নিজের অতিরিক্ত সেনা দিয়ে অনেক সময়েই যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে খুব সহজে যুদ্ধ জেতা যায়, কারন প্রতিপক্ষের কোনো সেনা অবশিষ্ট না থাকায় প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকে না। 

খেলা শেষে নিজের অতিরিক্ত সেনা টিকিয়ে রাখতে খেলার শুরু থেকে এমনভাবে সেনা বিনিময় করতে হয় যাতে নিজের কম শক্তি খরচ করে প্রতিপক্ষের বেশি সেনা খেয়ে নেওয়া যায়।

যেমন একটা ঘোড়া বা গজ এর বদলে একটা নৌকা খেয়ে নেওয়া লাভজনক। নৌকা ও গজ/ঘোড়ার বদলে মন্ত্রী খেয়ে নেওয়া লাভজনক। কারন মন্ত্রী ৯, নৌকা+গজ =৫+৩

দুটো বোড়ের বদলে একটা ঘোড়া বা গজ খেয়ে নেওয়া লাভজনক। ইত্যাদি। 

এইভাবে এই নিয়ম ব্যবহার করে খুব সহজে বিনিময়ের সময় লাভ না লোকসান হচ্ছে তা হিসাব করতে পারবেন।

আজ এই পর্যন্তই। এতদিনে আমরা খেলার জন্য তৈরী হয়েছি। এর পরের লেকচারে আমরা পুরো খেলা নিয়ে কথা বলবো।









দাবা খেলার কিছু বিশেষ নিয়ম - some special rules of chess

part 4

দাবা খেলার বিশেষ নিয়মাবলী


এখনও পর্যন্ত আমরা দাবার বোর্ড বসানো এবং ঘুটি চালার সাধারণ নিয়ম শিখেছি। এবার আমরা দাবা খেলার আরও কিছু বিশেষ নিয়ম শিখবো।

কিস্তি এবং কিস্তিমাত (check and checkmate) 

রাজার সাথে বোর্ডের অনান্য ঘুটির বিশাল পার্থক্য। বোর্ডের অনান্য সমস্ত ঘুটি প্রতিপক্ষ খেয়ে নিতে পারে, কিন্তু খেলার নিয়ম অনুযায়ী রাজা কে খাওয়া যায় না। সেই জনেই আগের লেকচারে বলেছিলাম রাজা সবচেয়ে মূল্যবান ঘুটি। 

দাবা খেলা জিততে প্রতিপক্ষের রাজা কে বন্দি করতে হয়। রাজা কে বন্দি করা মানে রাজাকে কৌশলে আক্রমণ করা, এবং রাজা এবং তার চারপাশের ঘরগুলিকে আক্রমণ করে বোর্ডে ঘুটির এমন অবস্থা তৈরী করা যাতে রাজা কোনো নিরাপদ ঘরে পৌছতে না পারে। এরকম ভাবে রাজাকে বন্দি করা সম্ভব হলে তাকে দাবার ভাষায় কিস্তিমাত বলা হয়। খেলতে চাইলে সবার আগে কিস্তিমাত সম্বন্ধে জানা আবশ্যক। কারন আপনার অনেক ঘুটি থাকলেও প্রতিপক্ষের রাজা কে কিস্তিমাত করতে না পারলে আপনি খেলা জিততে পারবেন না। বা, আপনার অনেক বেশি ঘুটি অবশিষ্ট থাকলেও আপনার রাজা কিস্তিমাত হয়ে গেলে আপনি খেলা হেরে যাবেন। কিস্তিমাত হলে খেলা সমপ্ত হয়। কিস্তি এবং কিস্তিমাত সম্বন্ধে এবার আমরা জানবো। 

যখন কোনো ঘুটি দিয়ে রাজা কে সরাসরি আক্রমন করা হয় তখন তাকে কিস্তি বলে। কখনও রাজা কে আক্রান্ত ঘরে রেখে দেওয়া যায় না রাজা কে কিস্তি দেওয়া হলে রাজা কে অবশ্যই কিস্তি থেকে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। কিস্তিতে তে থাকা রাজার নিরাপত্তা সাধারণত তিন রকম ভাবে সুনিশ্চিত করা যায়

১/ যে ঘুটি দিয়ে কিস্তি দেওয়া হয়েছে সেটি খেয়ে নেওয়া। (capture)
২/রাজা এবং আক্রমণকারী ঘুটির মধ্যে কোনো ঘুটি চাল এর মাধ্যমে রাজার সাথে আক্রান্ত ঘুটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা। (block) লক্ষ্য করুন, ঘোড়ার চাল ব্লক করা যায় না, কারন ঘোড়া লাফিয়ে চলতে পারে।
এবং
৩/রাজা কে আক্রান্ত ঘর থেকে অন্য কোনো নিরাপদ ঘরে সরিয়ে নেওয়া।

যখন উপরের তিনটির কোনো টা করা সম্ভব হয় না তখন রাজা নিরাপদ ঘরে সরে যেতে পারে না, তাই কিস্তিমাত হয় এবং খেলা সমাপ্ত হয়।

উদাহরণঃ


গুরুত্বপুর্ণ পজিশন

উপরের ছবিটি ভালো করে দেখুন। এই অবস্থায় সাদার চাল হলে কি কি হতে পারে সেসব আমরা দেখবো। মন্ত্রী যদি কোনার সবুজ ঘরে যায় তাহলে এই অবস্থা তৈরী হয়ঃ


কিস্তিমাত - ১


এখানে সাদার মন্ত্রী সবুজ রঙের ঘর এবং রাজা লাল রঙের ঘরের উপর নজর রেখেছে। কালোর রাজার কিস্তিমাত হয়ে গ্যাছে কারন রাজা আক্রান্ত, এবং চালার জন্য কোনো নিরাপদ ঘর নেই। 

আর একটা উদাহরণঃ


কিস্তিমাত - ২


এটা আর একটা কিস্তিমাত এর উদাহরণ। এখানে সাদা মন্ত্রী কালো রাজার চালের সমস্ত সম্ভাব্য ঘরের উপর নজর রেখেছে। এখানে কালোর রাজা সাদা মন্ত্রী কে সরাসরি আক্রমণ করেছে, কিন্তু খেলার নিয়ম অনুযায়ী কালো রাজা সাদা মন্ত্রী কে খেতে পারবে না। কারন মন্ত্রী কে সাদার রাজা রক্ষা করছে। তাই মন্ত্রী কে খেতে গেলে কালোর রাজা কে আক্রান্ত ঘরে (কিস্তি তে থাকা ঘর) যেতে হবে। এবং কিস্তিতে থাকা ঘরে রাজার চাল নিয়মবিরুদ্ধ।

আর একটা উদাহরণঃ


কিস্তি, কিন্তু কিস্তিমাত হয়নি
এখানে রাজার চালের জন্য একটাও ঘর অবশিষ্ট নেই, কিন্তু সাদার মন্ত্রী অরক্ষিত, তাই কালো রাজা সাদা মন্ত্রীকে খেয়ে নিতে পারে। তাই এটা কিস্তি, কিন্তু কিস্তিমাত নয়। এটা ভালো চাল নয়, কারন মন্ত্রী খাওয়ার পর সাদা আর খেলা জিততে পারবে না।

শেষ উদাহরণঃ


কালো রাজার কিস্তি নেই, চাল দেবার যায়গাও নেই। ড্র (stalemate)
এই অবস্থায় কালো রাজার কিস্তি নেই, কিন্তু কোনো বৈধ চাল ও নেই। তাই এই অবস্থায় খেলাটি ড্র বলে ঘোষণা করা হয়। এখানে সাদার শেষ চালটি খারাপ চাল ছিলো। খেলায় আপনার জেতার অবস্থা তৈরী হলে এরকম ড্র-এর সম্ভাবনা মাথায় রেখে খেলা পরিচালনা করুন।

কাসলিং বা দূর্গ প্রতিষ্ঠা (castling)

আগের সেকশনে কিস্তি ও কিস্তিমাত শিখতে গিয়ে আমরা রাজার গুরুত্ব নিশ্চয় বুঝেছি। ভালোভাবে খেলা পরিচালনা করতে গেলে রাজা কে নিরাপদে রাখা দরকার। রাজার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য একটা বিশেষ চাল দেওয়া যায়। এই চাল্ কে বলে কাসলিং বা দুর্গ প্রতিষ্ঠা। চাল টি নিচে ব্যখ্যা করা হলো।

আমরা এখনও অবধি জানি সাধারণ অবস্থায় রাজা যেকোনো দিকে কেবলমাত্র একঘর জেতে পারে। এবং একটা চালে কেবল মাত্র একটা ঘুটি চালা যায়। এই নিয়মের একটা ব্যতিক্রম আছে। একটা খেলায় মাত্র একবার এর জন্য রাজা এবং নৌকা সমেত একটা বিশেষ চাল দেওয়া যায়। এই চালে রাজা বোর্ডের ডান দিক বা বাম দিক, যে কোনো একটা দিকে দু'ঘর যায়, এবং রাজা যেদিকে যায় সেই দিকের নৌকা রাজা কে অতিক্রম করে রাজার পাশে বসে। কাসলিং এর উদ্দেশ্য হলো রাজার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রাজা কে বোর্ডের একপাশে নিয়ে যাওয়া এবং অনান্য সেনাদের দিয়ে কিস্তিমাত এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। কাসলিং চাল টি নিচের ছবি তে বোঝানো হয়েছে। 
রাজা ডান দিকে কাসল করলে সবুজ ঘরে যাবে, বাম দিকে কাসল করলে লাল ঘরে যাবে।  কাসলিং এর পর  নৌকার সম্ভাব্য চাল হলুদ তীর এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে।
কাসলিং এর পরঃ
ডান দিকে বা রাজার দিকে বা ছোটো (short) কাসলিং (নৌকা মাত্র দু'ঘর চলে )
বাম দিকে বা মন্ত্রীর দিকে বা বড় (long) কাসলিং  (নৌকা তিনঘর চলে )
কাসলিং চাল সফলভাবে প্রয়োগ করার জন্য বেশ কিছু শর্তাবলী পূরণ হওয়া আবশ্যকঃ


কাসলিং এর শর্তাবলীঃ

১/ কাসলিং এর আগে অবধি রাজা বা যে নৌকার সাথে কাসল করা হচ্ছে সেই নৌকা কে চালা চলবে না।

২/রাজা এবং কাসলিং এ ব্যবহৃত নৌকার মাঝে কোনো ঘুটি থাকা চলবে না।

৩/রাজা কিস্তি তে থাকা অবস্থায় কাসল করতে পারবে না, বা কাসলিং এর পথে রাজা কোনো কিস্তি অতিক্রম করতে পারবে না।


নিয়মের প্রয়োগ কিভাবে করবেন তা বোঝাবার জন্য কিছু উদাহরণ দেওয়া হলঃ


সাদা কাসল করতে পারবে না, কারন রাজার কিস্তি রয়েছে (লাল তীর); কালো কাসল করতে পারবে না কারন  কাসলিং এর পর রাজা মন্ত্রীর দ্বারা আক্রান্ত হবে (হলুদ তীর)।
সাদা কাসল করতে পারবে না, কারন মাঝের ঘরে কালো নৌকার কিস্তি  পড়বে। কালো কাসল করতে পারবে কারন কাসল করতে গেলে রাজাকে কিস্তি অতিক্রম করতে হবে না (নৌকার কিস্তি অতিক্রম করতে নিয়মে কোনো বাধা নেই)।
এই ছবিতে কোন কাসলিং নিয়মসম্মত আর কোনটা নিয়মবিরুদ্ধ সেটা উত্তর দেবার চেষ্টা করুন।


en passant বা বোড়ে একঘর নামিয়ে খাওয়া 


en passant আসলে একটি ফরাসী শব্দ। নিয়মটি এখানে ব্যখ্যা করা হলো। কারও বোড়ে পঞ্চম র‍্যাঙ্কে থাকলে এবং প্রতিপক্ষের কোনো বোড়ে পাশের ফাইল দিয়ে সপ্তম র‍্যাঙ্ক থেকে দুঘর এগিয়ে পঞ্চম র‍্যাঙ্কে চলে এলে প্রথম বোড়ে টি দ্বিতীয় বোড়ে টি কে ঠিক পরের চালে একঘর নামিয়ে খেতে পারে। খাওয়ার চাল দেওয়ার সময় ভাবতে হবে যেন দ্বিতীয় বোড়ে টি দু'ঘরের বদলে আগের চালে একঘর এগিয়েছিল। এই ধরনের বিশেষ চাল শুধুমাত্র এরকম অবস্থাতেই দেওয়া যাবে, অন্য কোনো সময় বা অন্য কোনো ঘুটির ক্ষেত্রে দেওয়া যাবে না। নিয়মটি ভালো করে বোঝার জন্য নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন।
কালোর প্রথম চাল, তারপর সাদার চাল। en passant নিয়মের উদাহরণ
মনে রাখার উপায়ঃ 
কারও বোড়ে পঞ্চম র‍্যাঙ্কে থাকলে এবং প্রতিপক্ষের বোড়ে সপ্তম র‍্যাঙ্কে থাকলে প্রতিপক্ষের বোড়ে দুইঘর চালের মাধ্যমে প্রথম বোড়ে টি কে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী খাওয়ার সুযোগ না দিয়ে পাশ কাটিয়ে পালাবার সুযোগ পায়। ফলে সাধারণ নিয়ম অনুসারে প্রথম বোড়েটি এই অবস্থায় দ্বিতীয় বোড়েটি কে খাওয়ার সুযোগ পায় না। এমনটি যাতে না হয় সেটা দেখার জন্য প্রথম বোড়ে কে একবার সুযোগ দেওয়ার জন্য এই বিশেষ নিয়ম প্রয়োগ করা হয়। en passant নিয়ম না থাকলে উপরের ছবিতে সাদা বোড়েটি কালো বোড়ে কে খাওয়ার সুযোগ পেতো না।

একটু কঠিন উদাহরণঃ
কালোর প্রথম চাল, তারপর সাদার চাল। সম্ভাব্য কিছু চাল তীর দিয়ে দেখানো হয়েছে।
উপরের ছবিতে ডান দিকের সবুজ ঘরের বোড়েকে এই বিশেষ নিয়মে খাওয়ার উপায় আছে। লাল তীর টা en passant নিয়মে খাওয়া বোঝাচ্ছে, সবুজ কোনাকুনি তীর টা সাধারণ নিয়মে খাওয়া বোঝাচ্ছে। বাম দিকের হলুদ ঘরের কালো বোড়ে কে খাওয়ার কোনো উপায় নেই, কারন বোড়েটি মাত্র একঘর এগিয়েছে। এর আগে সাদার চাল থাকার সময় হলুদ ঘরের বোড়ে খাবার সুযোগ ছিল, কিন্তু আর নেই।


বোড়ের উত্তরণ (pawn promotion)

আমরা আগের লেকচারে জেনেছি যে বোড়ে শুধুমাত্র সামনে চলতে পারে, পাশে বা পিছনে যেতে পারে না। তাহলে কোনো বোড়ে বাধাপ্রাপ্ত না হলে সামনে চলতে চলতে একসময় বোর্ডের শেষ সীমায় পৌছবে। এখন প্রশ্ন হলো, বোড়ে বোর্ডের শেষ প্রান্তে [অষ্টম র‍্যাঙ্ক] পৌছলে কী হয়? উত্তরঃ বোড়ে শেষ প্রান্তে পৌছলে আর বোড়ে থাকতে পারে না, বোড়ের পদোন্নতি হয়। 
কারো বোড়ে সামনে এগোতে এগোতে বোর্ডের শেষ প্রান্তে পৌছলে তাকে promotion বা উত্তরণ বলে। বোড়ে অষ্টম ঘরে পৌছলে বোড়ে বা রাজা ছাড়া অন্য যে কোনো ঘুটি তে পরিণত হতে পারে। যার বোড়ে সেই খেলোয়াড় নিজের ইচ্ছেমতো একটা ঘুটি নিতে পারেন। খেলোয়াড় রা সাধারানত বোড়ের বদলে মন্ত্রী নিয়ে থাকেন, কারন মন্ত্রী সবচেয়ে শক্তিশালী। 
সাদা বোড়ে দু'চাল পরেই বোড়ে উত্তরণের মাধ্যমে একটা মন্ত্রী নিতে পারে। 

তবে কখনও কখনও মন্ত্রীর বদলে অন্য ঘুটি নিতেও দেখা যায়। বোড়ের পদন্নোতির পর মন্ত্রীর বদলে অন্য কোনো ঘুটি তে উত্তরণ হলে তাকে under promotion বলে। under promotion সাধারনত দেখা যায় না, তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে কাজে লাগে।
সাদার চাল। সাদা বোড়ে চালের পর ঘোড়া নিলে একসাথে কালোর রাজা ও মন্ত্রী আক্রমণ করবে। পরের চালে মন্ত্রী খেয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। খেলা ড্র 


সাদার চাল। সাদা বোড়ে উত্তরণের পর মন্ত্রী নিলে খেলা ড্র (stalemate).  নৌকা নিলে খেলা জেতা সম্ভব।  [নৌকা নিয়ে কিভাবে জিততে হয় পরে শিখবো]

খেলা ড্র বা টাই হবার নিয়মাবলীঃ

স্টেলমেট (stalemate) হলে খেলা ড্র হয় - খেলার কোনো সময় কোনো পক্ষের রাজা কিস্তি তে নেই, অথচ তার পক্ষের কোন নিয়ম মাফিক চাল দেওয়া সম্ভব নয়, এরকম অবস্থার সৃষ্টি হলে তাকে stalemate বলে। এই অবস্থায় খেলা ড্র বলে ঘোষনা করা হয়।

কোনো খেলায় বোর্ডে একই পজিশন তিনবার ফেরত এলে (3 fold repetition) খেলা ড্র হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দুজন খেলোয়াড়ের মধ্যে শুধুমাত্র একজন একই চাল বারবার দিলে পজিশন রিপিট হবার সম্ভবনা কম, পজিশন রিপিট এর জন্য সাধারণত দুজন খেলোয়াড় কেই চাল রিপিট করতে হয়। এমন নিয়ম না থাকলে কোনো একজন খেলোয়াড় একই চাল বারবার দিয়ে ভালো খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো ড্র করতে পারতো।

কোনো পক্ষের কোনো বোড়ের চাল দেওয়া না হলে বা কোনো ঘুটি খাওয়া না হলে পঞ্চাশ চাল পর খেলা ড্র হয়। বাস্তবে দেখা গেছে এমন অবস্থা সাধারণত খেলার শেষের দিকে হয়। শেষের দিকে বোর্ডে বেশি ঘুটি অবশিষ্ট থাকে না। অনেক সময় কোনো বোড়ে থাকে না। বোর্ডে বোড়ে না থাকলে স্বভাবতই বোড়ে চালের সম্ভাবনা নেই। যেমন ধরুন আপনার রাজা এবং মন্ত্রীর বদলে প্রতিপক্ষের শুধু রাজা থাকলে বিপক্ষকে কিস্তিমাত করার জন্য আপনি সর্বোচ্চ ৫০ টি চাল পাবেন।

কোনো খেলোয়ার তার প্রতিপক্ষ কে অনির্দিষ্ট কালীন কিস্তি (perpetual check) দিতে সক্ষম হলে কিন্তু কিস্তিমাত করতে অক্ষম হলে খেলা ড্র হয়, কারন এক্ষেত্রে দ্বিতীয় খেলোয়াড় টি কিস্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে অক্ষম।



কালোর চাল। কালো সাদাকে বারবার কিস্তি দিয়ে খেলা ড্র করতে পারে। কিভাবে করা যায় সমাধান করার চেষ্টা করুন।

উপরের ছবিতে সাদা পরের চালে হলুদ তীর বরাবর একচালে কালো কে কিস্তিমাত করে দেবে। এবং এর বিরুদ্ধে কালোর কোনো রক্ষণ নেই। কিন্তু এখন কালোর চাল। কালো মন্ত্রী দিয়ে সাদা রাজাকে অনির্দিষ্টকালীন কিস্তি দিয়ে যেতে পারে, এর থেকে সাদার কোনো মুক্তি নেই। সুতরাং প্রায় জেতা গেমে সাদাকে  ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

খেলার যে কোনও সময়ে দুজন খেলোয়াড় খেলা ড্র করতে সম্মত হতে পারেন। (draw agreement) এক্ষেত্রেও খেলা ড্র হয়। বড় খেলোয়াড়রা সাধারণত খেলার শেষের দিকে, যখন কারো জেতার খুব একটা সম্ভাবনা থাকে না তখন ড্র করতে সম্মত হন। তবে নতুন খেলোয়াড় দের আমি খেলার শেষ অবধি খেলতে পরামর্শ দেবো।


(insufficient material): খেলার শেষে বোর্ডে কিস্তিমাতের জন্য যথেষ্ঠ ঘুটি অবশিষ্ট না থাকলে খেলা সাধারণ নিয়মে ড্র হয়। কিস্তিমাতের যথেষ্ঠ ঘুটি বলতে কি বোঝায় সেসব আমরা পরে শিখবো। 

আজকের লেখাটা এই পর্যন্তই। আশাকরি সমস্ত গুরুত্বপুর্ণ নিয়ম কভার করেছি। কিছু বাদ থেকে গেলে পরে কভার করবো। লেখাটি কেমন লাগলো জানাবেন।